দৈনিক প্রত্যয় ডেস্ক:পাহাড় ও সমতলে লক্ষাধিক একর বনভুমি বেদখলে । বেদখলে থাকা এসব বনভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।
জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির এক বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেদনে দখলে থাকা বনভূমির সর্বশেষ অবস্থা, উচ্ছেদ প্রক্রিয়া, নিয়োগ করা আইনজীবীদের ভূমিকা, দখলদার উচ্ছেদে কতবার নোটিস দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কেও তথ্য চেয়েছে কমিটি।
সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, এক লাখ একরের বেশি বনভূমি দখলে রয়েছে। এই এক লাখ পুরোপুরি কাগজে-কলমে বনের জমি। এর বাইরেও প্রচুর বনভূমি দখলে রয়েছে। আমরা এ জমির বিষয়টি আগে দেখতে চাই। এজন্য মন্ত্রণালয়কে এ সম্পর্কে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরা দেখতে চাই, দখলদারদের উচ্ছেদে কতবার নোটিস দেয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ কাজে জড়িত আইনজীবীদের কাজেরও মূল্যায়ন করতে চাই আমরা।
সাবের হোসেন চৌধুরী আরো বলেন, অনেক জমি সিএস খতিয়ানে বন বিভাগের মালিকানায় ছিল। পরে সিএস খতিয়ানে সেটা আবার ডিসি অফিসের কাছে দেয়া হয়। ডিসি অফিস সেগুলো আবার বিভিন্নভাবে লিজ দিয়েছে। এগুলো ফেরত আনতে হবে। সেজন্য আইনি প্রক্রিয়া বের করতে বলা হয়েছে।
এদিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে এক কোটি গাছের চারা রোপণের কর্মসূচিতে সামাজিক সম্পৃক্ততা চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। গত ১৬ জুলাই মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে এক কোটি চারা বিতরণ ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে এক কোটি গাছের চারা রোপণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারা দেশে এক কোটি গাছের চারা রোপণ করা হবে।
এক কোটি গাছের চারার মধ্যে ৫০ শতাংশ ফলদ এবং বাকি ৫০ শতাংশ বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী। কোনো বিদেশী প্রজাতির গাছের চারা লাগানো হবে না। দেশের প্রতিটি উপজেলায় ২০ হাজার ৩২৫টি করে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ বিতরণ করতে বন বিভাগের নার্সারিগুলোতে সেগুলো উত্পন্ন করা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ৩১ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৪৫৩টি চারা রোপণ করা হয়েছে।
কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এই যে গাছ লাগানো হচ্ছে, এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবতে হবে। কমিটি বলেছে জিআইএস ম্যাপিং করে কোন এলাকায় কী ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে, তা মূল্যায়ন করতে হবে। এর অর্থনৈতিক দিকেরও মূল্যায়ন করতে হবে।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বৃক্ষরোপণে যাতে কোনো আইনি জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা, গাছের চারা পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে সম্পৃক্ত করা যায় কিনা তার সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ের গবেষণাকে সরকারের কাজে সম্পৃক্ত করতে প্রতি বছর ‘পরিবেশ গবেষণা মেলা’ আয়োজনের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে এ মেলার আয়োজন করা যায় কিনা সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
এ বিষয়ে সাবের হোসেন বলেন, পরিবেশ নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু সরকার সবসময় সেটা জানতে পারছে না। এ গবেষণাগুলো সরকারের তথা পরিবেশ রক্ষায় কাজে লাগাতে হবে। সেজন্য এখানে গবেষকদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সেজন্য এ মেলার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। এ মেলা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন গবেষকের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে।
বৈঠকে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত ফরেস্টার মো. ইউসুফ উদ্দিনের অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে শোক প্রস্তাব প্রেরণ করার জন্য কমিটি কর্তৃক মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। বৈঠকে সুন্দরবনসহ অন্যান্য জেলায় বনদস্যু কর্তৃক আহত ও নিহত কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ ও ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি, দ্রুত ভাতা প্রদান, আসামিদের তালিকা, মামলার তদারকি, সাজার মেয়াদ ইত্যাদি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কমিটি কর্তৃক মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।
সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মো. রেজাউল করিম বাবলু ও খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশ নেন।